Title | : | প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ |
Author | : | |
Rating | : | |
ISBN | : | - |
Language | : | Bengali |
Format Type | : | Hardcover |
Number of Pages | : | 184 |
Publication | : | First published February 20, 2019 |
ওদিকে দেড় হাজার বছর আগে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া রয়েল লাইব্রেরি অভ আলেকজান্দ্রিয়া ফের জেগে উঠল কেমন করে? কে জানত– সঙ্গত কারণে টিকে যাওয়া কয়েকটি মূল্যবান প্যাপিরাস স্ক্রল অবলম্বনে যুগ যুগ ধরে গবেষণা চলছে গুপ্ত জ্ঞানের সন্ধানে– যে জ্ঞান হাসিল করা গেলেও ধরে রাখা যায় না!
‘পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ’ খ্যাত কালো জাদুকর অ্যালিস্টার ক্রাউলির গুপ্ত ভ্রাতৃসংঘ O.T.O. কেন তলে তলে নিরীহ ফয়েজের পিছু নিল? ভালো আর কালোর এই দ্বন্দ্বের ফলাফল নিয়ে যখন ফিসফাস চলছে রুহানি জগতে তখন আপনি দম ফেলবেন কীভাবে পাঠক? বাংলা সাহিত্যের প্রথম থিওলজিক্যাল থ্রিলারের সাথে সায়েন্স, ফ্যান্টাসি, অকাল্ট, হিস্ট্রির মিশ্রণে এ কোন আজিব এক্সপেরিমেন্ট ছকের বাইরে?
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : সাসপেন্সের চাপে স্নায়ুকোষের ডেন্ড্রন-অ্যাক্সন সংযোগ ছিঁড়ে গেলে লেখক-প্রকাশক দায়ী নন।
প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ Reviews
-
এবারের বই মেলায় প্রকাশিত একমাত্র বই যেটি পড়া হয়েছে। যেহেতু লেখকের আগের দুইটি সাইন্স ফিকশন বই পড়া ছিলো তাই প্রথম যখন বইটি হাতে পাই, ভেবেছিলাম এটিও সাইন্স ফিকশনই হবে। কিন্তু পড়া শেষ করে বেশ অবাক হতে হয়েছে। শুধু সাইন্স ফিকশন বললে কম বলা হবে, থিউলজিক্যাল থ্রিলার, এডভেঞ্চার, রহস্য সব মিলিয়ে সার্থক একটি উপন্যাস। বাংলায় ইসলাম ধর্মকে ভিত্তি করে এমন থ্রিলার, সাইন্স ফিকশন উপন্যাস আগে চোখে পড়েনি। স্বীকার করতেই হচ্ছে, লেখকের আধ্যাত্মিক ও সুফিজমের উপর বিস্তর পড়াশোনা আছে।
লেখক বেশ কতগুলো হাইপো-থিসিস তুলে ধরেছেন এই গল্পে। এডভান্স লেভেলের পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের মাধ্যমে সময়কে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং এর জন্যে যে নতুন ধারণার প্রবর্তন করেছেন সেটা নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ ও অভিনব। শুধু সময়কে সংজ্ঞায়িত করেই ক্ষান্ত হননি, সময় কিভাবে ধীর ও দ্রুত চলতে পারে অথবা কখন একেবারে স্থির হয়ে যেতে পারে সে বিষয়েও কিছুটা ধারণা দিয়েছেন। এই বিষয়টা সাইন্স ফিকশন প্রেমীদের কাছে খুবই উপভোগ্য হবে। তবে কি সে হাইপো-থিসিস বা ধারণা তা জানতে বইটি পড়তে হবে।
যুগে যুগে মহা-মানবেরা অত্যন্ত গোপনীয়, শক্তিশালী ও রহস্যময় অজানা এক জ্ঞানের পেছনে যে শ্রম ও সময় দিয়েছেন এর কারণ ব্যাখ্যা করে দেওয়া হাইপো-থিসিস পড়ে মাথার ভেতর চিন্তার ঝড় বয়ে যাবে নিশ্চিত। এই রহস্যময় জ্ঞান এমনি গুরুত্বপূর্ণ, যা হাসিল হলে দুনিয়ার ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য ���িনষ্ট হয়ে ভয়ংকরভাবে একদিকে ঝুকে পড়বে। এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব সাহিত্যে অনেক গল্প কাহিনী লেখা হয়েছে। তবে এই গল্পে লেখক এই গুপ্তজ্ঞানের পেছনে যে দর্শন, উদ্দেশ্য ও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন তা খুবই বাস্তবসম্মত বলে মনে হয়েছে। পাঠকের মুহূর্তেই মনে হবে আসলেই তো! ঠিক এমনটিই তো হওয়া উচিত! কি সেই ব্যাখ্যা? কি সেই রহস্যময় জ্ঞান? তা জানার জন্যে এবং এর পেছনের দার্শনীক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারটি ঠিকমতো বুঝতে হলে চোখ রাখতে হবে গল্পের শেষের অংশে।
ইসলামের ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক বুজুর্গ ব্যাক্তির আবির্ভাব পাঠকের চিন্তা জগতে একটা ধাক্কার মতো লাগবে নিশ্চিত করেই বলা যায়। ইসলাম ধর্মের অত্যন্ত রহস্যময় এই বুজুর্গ ব্যাক্তির ব্যাপারে ধর্ম গ্রন্থের বাইরে তেমন একটা জানা যায় না, সেখানে এমন একটি চরিত্রকে সাইন্স ফিকশন ফ্যান্টাসিতে নিয়ে আসা লেখকের দুঃসাহসিক চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। এই বুজুর্গ ব্যাক্তির ব্যাপারে আরও জানার আগ্রহ বেড়ে যাবে বইটি পড়ে।
মাইক্রো মানবের ধারণা পড়ে অবাক হতে হয়েছে। প্রাচীন যুগেও এমন মাইক্রো মানব, যেটাকে বর্তমানের ন্যানো-টেকনোলজির অনুরূপ মনে হয়েছে, নিয়ে এতো গবেষণা হয়েছে ভাবাই দুষ্কর। গল্পে এই অংশটি যখন পাঠক পড়বে তখন গা শিরশির একটা ভাব হবে সেটি জোর দিয়ে বলা যায়। এই বিষয়গুলো বইটিকে নিছক গল্প নয়, একটি ইনফরমেশনের সোর্স হিসাবেও পাঠকের সামনে চিন্তার নতুন জগত উন্মোচিত করবে।
কিছু অলৌকিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এই গল্পে, যেগুলো হয়তো গল্প-সাহিত্যে বা ধর্মীয় গ্রন্থে নতুন কিছু নয়, তবে একটি থ্রিলার কিংবা সাইন্স ফিকশন গল্পে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবে লেখক যেভাবে তুলে ধরেছেন, এতে তাঁর লেখার মন্সিয়ানা স্বীকার করতেই হবে। খুব পরিমিতভাবে, যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকু অলৌকিক বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন যা মোটেও অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়নি। ইসলামিক আবহে এই বিষয়গুলো যেভাবে তুলে আনা হয়েছে তা বাংলা সাহিত্যে সত্যিই বিরল।
একের পর এক চমক, কাহিনীর বাক, নতুন পরিস্থিতির সম্মোখিন হওয়া, প্রেম ভালোবাসা, বিশ্বাস ঘাতকতা, কাকতালীয় সংযোগ, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য, অলৌকিকতা, এডভেঞ্চার, হরর, ইতিহাস, হালকা একশন, আধ্যাত্মিকতা, ধর্ম, চরমপন্থি কাল্ট, প্রকৃতির বর্ণনা, এডভান্স লেভেলের পদার্থ বিজ্ঞান, কি নেই এই উপন্যাসে! তার উপর লেখার স্টাইল ও সাবলীল উপস্থাপন ভঙ্গি সব মিলিয়ে খুব উঁচু মানের একটি লেখাই বলা যায় তরুণ লেখক, তাসরুজ্জামান বাবুর “প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ”
কয়েকটা বিষয় কিছুটা অস্বাভাবিক লেগেছে। সুপার টেকনোলজির এই যুগে বিশাল আকারের বিখ্যাত একটি ল্যাবরেটরীর চেয়েও বড় আকারের একটি পরীক্ষাগার বানানো হলো অথচ শুধু দুই একজন ব্যতীত কেউ টেরই পেলো না বা এতো বিশাল আকারের একটি ল্যাবের অপারেশন, মেইনটেনেন্স এবং ডাটা এনালাইসিসের মতো কাজ করার কেউ নেই, সবই দুই তিনজনের উপর ন্যস্ত? এই বিষয়টা খটকার মতো লেগেছে। আবার যে স্থানে এই ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে সেটি আদৌ করা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে কিছুটা দ্বিধা রয়ে গেছে। তবে মূল গল্পের তুলনায় এই বিষয়টা খুবই নগন্য, গল্পের ভেতরে একবার ঢুকে গেলে ভুলেও এই বিষয় গুলো মনে উঁকি দিবে না। আর এমন শতভাগ শুদ্ধতা নিয়ে তো আর সাইন্স ফিকশন গল্প হবে না, সেক্ষেত্রে এটি হয়ে যাবে একটি বৈজ্ঞানীক জার্নাল বা থিসিস পেপার।
ফয়েজ আর রোদসীর রসায়নটা কিছুটা শিশুসুলভ লেগেছে। যদিও এটি মূল গল্পের প্রবাহতে কোনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। গল্পের মূল চরিত্র একেক জনকে প্রায় সুপার হিউম্যান মনে হয়েছে। কয়েকজনের ভেতর এমন সব ভিন্নধর্মী গুণাবলি সন্নিবেশিত করা হয়েছে যে এমন চি���্তা আসাটা স্বাভাবিক।
ঐতিহাসিকভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী এক নারী চরিত্রকে যেভাবে একজন বড় মাপের গবেষক হিসাবে দেখানো হয়েছে সেটি আরেকটু বিস্তারিত হলে ভালো লাগত। উঁনি রূপে ও প্রভাবে ছিলেন অনন্য, কিন্তু তাঁর এই দিকটার ব্যাপারে হয়তো খুব কম পাঠিকই অবহিত। এই অংশটুকু পড়ে মনে হয়েছে, শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল! (ডিসক্লেইমার: এখানে একটু ভুল হয়ে গেছে, দুই জনের নাম একই হয়ে যাওয়াতে ভুলক্রমে দুজনকে এক ব্যক্তি মনে করেছিলাম। পরে লেখক ভুলটি ধরিয়ে দিয়েছেন। গবেষক ও রাজনীতিতে প্রভাবশালী নারীপ্রকৃতপক্ষে ভিন্ন দুটি চরিত্র)
ইতিহাসের কিছু ঘটনার লেখক সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন। বেশ কয়েকটি গুগলের মাধ্যমে ক্রস-চেক করে দেখে সত্যতা নিশ্চিত হয়েছি, আশা করি বাকী গুলোও অনুরূপ হবে।
সাইন্স ফিকশন এর নামে অনেক ফালতু বই পড়ার ‘সৌভাগ্য’ হয়েছে এর বিপরীতে তাসরুজ্জামান বাবুর লেখা সাইন্স ফিকশন বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে নিঃসন্দেহে। লেখকের আগের দুটি বই এর চেয়ে এই বইটির লেখার মান ও কাহিনী সমৃদ্ধ মনে হয়েছে। বুঝা যাচ্ছে লেখক নিজের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে ও লেখার মান উত্তর উত্তর উন্নত করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৮/১০। লেখকের পরবর্তী বই এর অপেক্ষায় থাকলাম। -
বই : প্রজেক্ট হাজার আল ফালাসিফাহ
লেখক : তাসরুজ্জামান বাবু
জনরা: থিওলজিকাল থ্রিলার
গল্পবাঁক
-------------------
এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চাকরী বাকরী না পেয়ে মাদরাসা শিক্ষকতায় যোগ দেয়। মফস্বলের সে মাদরাসাটি আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও আদতে তা নয়। মাদরাসার শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী মুফিদ খুলনাভী একজন রহস্যময় মানুষ। মাদরাসাকে ঘিরে বেশ কিছু ব্যাখ্যার অযোগ্য ঘটনা ঘটতে থাকে। একরাতে নিষিদ্ধ সময়ে হুজুরের কক্ষে উঁকি দিয়ে সূত্রপাত ঘটালো এমন কিছুর যা ছিলো তার কল্পনার অতীত। ঘটনা আস্তে আস্তে বাংলাদেশের এক মফস্বল থেকে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে গড়ায়, সেখান থে���ে বিস্তৃত হয় বহুদূর। দেখা মেলে সিক্রেট সংগঠনের। এভাবে গল্প এগোয়। এবং পাঠককে একরকম ঘোরের মধ্য রেখে সমাপ্তি টানেন লেখক।
গল্পের ভালো-মন্দ
---------------------------------
গল্পটা আমার কাছে অসম্ভব ইউনিক লেগেছে। ইসলামিক প্রেক্ষাপটে এমন একটা বিষয় নিয়ে থ্রিলার লেখার প্রয়াস কেউ করেছে, ব্যাপারটাই ভাবতেই দারুণ লাগে। এই ধরনের প্রয়াস ও তার বাস্তবিক প্রয়োগ দেখাতে তুখোড় সৃজনশীল হতে হয়, এদিক দিয়ে লেখক বাহবা পাবেন। বর্ণনাভঙ্গিও পাঠক ধরে রাখার মতো। উপন্যাসটা শেষ পর্যন্ত মোটামুটি লেভেলের গতিশীল ছিলো। বিজ্ঞান, ইতিহাস, তথ্য ও অন্যান্য আগ্রহোদ্দীপক ঘটনাগুলো উপভোগ করেছি। ভালো লেগেছে উপন্যাসটির এসব দিক।
গল্পের মন্দ দিক বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। একে একে আসি। প্রথমেই বলবো প্রচ্ছদের কথা। একটা ভালো ও মানানসই প্রচ্ছদ সবসময়ই পাঠকের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রচ্ছদটা গল্পকে রিপ্রেজেন্ট করেনি বলেই মনে হল আমার।
ভাষাশৈলী অনেকটা কাটখোট্টা ; পাঠকের কিছুটা সমস্যা হতে পরে পড়তে। বেশ কিছু অপ্রাসঙ্গিক আলাপ এসেছে যার কোনো দরকার ছিল না।
আর সবথেকে বড় ধোয়াশা হল ক্যারেক্টারদের স্ক্রিনটাইম খুবই কম। এটা খুবই হতাশাজনক। আমি কিছুদিন আগে বর্তমান সময়ের লেখকদের সমালোচনা করে এক পোস্টে বলেছিলাম তারা শুধু অকারণে তথ্য দিয়ে বই বড় করে। এই বইয়েও কারণে অকারণে অনেক তথ্য এসেছে যেগুলোর কোনো দরকার ই ছিল না। আর আমা��� মনে হয়েছে তথ্যগুলো স্রেফ ইন্টারনেট থেকে হুবুহু কপি মেরে দেওয়া হয়েছে। যেখানে ক্যারেক্টারদের স্ক্রিনটাইম বাড়িয়ে গল্প ডিটেইলড্ করার সুন্দর সুযোগ আছে সেখানে অকারণে তথ্যের বাহুল্য মানায় না। তথ্যের দরকার পড়লে ব্লগ আছে, ইন্টারনেট আছে।
সবশেষে বলবো, লেখকের হাতে নিঃসন্দেহে জাদু আছে। তিনি মোটামুটি পুরোটা সময় আমায় গল্পে ধরে রেখেছেন। গল্পের নায়ক ফয়েজ হলেও খুলনাভি হুজুর আমার মন ছুঁয়ে গেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকলেও বইটা সবমিলিয়ে বেশ ভালো। এরকম একটা টপিকে এত সুন্দর একটা গল্প বলার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। ওনার পরবর্তী বইয়ের জন্য শুভকামনা। -
বইয়ের নামঃ প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ
লেখকঃ তাসরুজ্জামান বাবু
বইয়ের ধরণঃ থিওলজিক্যাল থ্রিলার
প্রকাশকঃ সময় প্রকাশন
প্রচ্ছদঃ তাসরুজ্জামান বাবু
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (২০ ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাবে।)
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮৪
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩২০ টাকা
ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক বরাবরই সাংঘর্ষিক। ধর্ম যেখানে যুক্তি আর বিশ্বাসের কথা বলে, সেখানে বিজ্ঞান কেবল যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের কথা বলে। ধর্মে যুক্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেবল বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে। আর ঠিক এখানেই ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। কালের সুদীর্ঘ পরিক্রমায় যুগের পর যুগ ধরে এই দ্বন্দ্ব এক ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে নিজের আসন বেশ পাকাপোক্ত-ই করে নিয়েছে।
এই দ্বন্দ্বের সম্পর্ককে সাহিত্যের পাতায় তুলে এনেছেন সমসাময়িক কালের জনপ্রিয় বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক তাসরুজ্জামান বাবু। ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে তিনি এমন এক উপন্যাস রচনা করেছেন, যা পাঠকের কাছে কখনো সায়েন্স ফিকশন মনে হবে; আবার কখনোবা ধর্মভিত্তিক থ্রিলার (থিওলজিক্যাল থ্রিলার) বলে মনে হবে। হাজার বছরের পুরনো আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি পুনরুদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের কাহিনী এগিয়েছে। এর সাথে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ের যোগসাজশ এটাকে আলাদা এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। এছাড়া নর-নারীর চিরন্তন সম্পর্কের রসায়ন উপন্যাসের গল্পটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
উপন্যাসের গল্পের সূত্রপাত হয় অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। অন্য একজনকে খুন করতে এসে খুনি নিজেকেই খুন করে ফেলে! এ নিয়ে পুরো গ্রামে শুরু হয় নানা জল্পকল্পনা! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা কথা ছড়াতে শুরু করে চারপাশে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে— খোদ গোয়েন্দা পুলিশ পর্যন্ত এই রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারে না। ফলে কল্পনার জগতে নতুন নতুন সব দিগন্ত যুক্ত হতে থাকে। এসব রহস্যের মূলে যুক্ত থাকেন আব্দুল মফিজ খুলনাভী নামক এক মাদ্রাসা শিক্ষক। ধীরে ধীরে তার প্রকৃত পরিচয় বেরিয়ে আসে। অন্যদিকে, ফয়েজ নামক এক যুবকের সাথে রোদসী নামক এক মেয়ের প্রেমের ব্যাপারটি গল্পটিকে এক আলাদা মহিমা দান করেছে। শেষ পর্যন্ত কী হবে? রোদসী কি পাবে তার স্বপ্নের পুরুষকে? কিংবা আব্দুল মফিজ হুজুর কি পারবেন তার প্রিয় ছাত্রকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত করতে? তুমুল সাসপেন্সে পরিপূর্ণ এই উপন্যাসে এমন প্রশ্নের জবাব পেতে চাইল�� শেষ মুহূর্ত অবধি পড়তে হবে বইটি।
এবার আসি চরিত্রের আলোচনায়। উপন্যাসে প্রধানতম চরিত্রে ঠিক কাকে রাখা হয়েছে, তা নির্ণয় করা রীতিমতো এক দুরূহ কাজ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। গুরুত্বের বিচারে আব্দুল মফিজ হুজুর আর ফয়েজ— কেউই পিছিয়ে নেই কোনোদিক থেকে। আব্দুল মফিজ হুজুর চরিত্রটির মাধ্যমে এক সদা রহস্যময়ী চরিত্রকে তুলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক তাসরুজ্জামান বাবু। খোদা ভীরু ও সদা ধর্মকর্মে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তির মাঝেও যে এমন একজন রহস্যময় ব্যক্তি বাস করতে পারেন, তা এই উপন্যাসটি না পড়লে বুঝতে পারতাম না। এছাড়া এই চরিত্রের মাধ্যমে সমাজের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা একজন প্রকৃত উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইদানীং সময়ে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা ব্যক্তিদেরকে পদে পদে হেনস্তা করবার কিংবা অপমান-অপদস্ত করবার একটা অসুস্থ তথা বিকৃত মানসিকতার চর্চা অনলাইনে/অফলাইনে সর্বত্র দেখা যায়। এই চরিত্রের সার্থক চিত্রায়ন যে তাদের জন্য রীতিমতো চপেটাঘাত তুল্য ব্যাপার, সে কথা কি আলাদা করে বলবার কোনো প্রয়োজন আছে, প্রিয় পাঠক?
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রাখা হয়েছে ফয়েজকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র ফয়েজ ঘটনাক্রমে একটি মাদ্রাসায় বিজ্ঞান শিক্ষক পদে যোগ দেন। সেখানেই তার পরিচয় হয় আব্দুল মফিজ হুজুরের সাথে। তারপর তার জীবনে একের পর এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে শুরু করে। অন্যদিকে, ঘটনাক্রমে মিশর গিয়ে তিনি তার পুরনো প্রেয়সীর খোঁজ পেয়ে যান। শুরু হয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত। এগিয়ে চলে উপন্যাসের গল্প।
উপরোক্ত দুইটি চরিত্র ছাড়াও গল্পের প্রয়োজনে আরো কিছু চরিত্র সৃষ্টি করা হয়েছে আলোচ্য উপন্যাসে। তন্মধ্যে রোদসীর নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হবে। এছাড়া অন্যান্য যেসব চরিত্রের সার্থক চিত্রায়ন ঘটেছে, সেগুলো উপন্যাসের গল্পে এক আলাদা গতিময়তা দান করেছে। এক কথায় বলতে গেলে, উপন্যাসের গল্পে বৈচিত্র্য সৃষ্টির কাজে এগুলোর কোনো বিকল্প ছিল না। উপন্যাসের অন্য পাঠকেরা এ ব্যাপারে আমার সাথে একমত হবেন বলে আশা রাখি।
এবার উক্ত উপন্যাসের ভাষারীতি নিয়ে কথা বলার পালা। উপন্যাসের গল্পে মূলত খুলনার আঞ্চলিক ভাষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, বিশেষত কথোপকথনের ক্ষেত্রে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে চলিত ভাষারীতি অনুসরণ করা হয়েছে। আঞ্চলিক ও চলিত ভাষার এমন মিশ্রণ ব্যাকরণগত দিক দিয়ে দূষণের সৃষ্টি করলেও পাঠক হিসেবে তাতে তেমন কোনো অসুবিধায় পড়তে হয়নি আমাক��। এছাড়া পরিশীলিত শব্দচয়ন একে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রয়োগ থাকায় তা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য অসুবিধাজনক হলেও হতে পারে।
সবমিলিয়ে, দারুণ এক উপন্যাসের নাম "প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ"। প্রতিটি পাতায় তুমুল সাসপেন্সে ভরপুর এই উপন্যাস পাঠককে শেষ পাতা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এর ঘটনার বিন্যাস আপনাকে বই ছেড়ে উঠতে দিবে না কিছুতেই! কী, বিশ্বা�� হচ্ছে না তো? বিশ্বাস না হলে নিজেই পড়ে দেখুন না একবার!
নিজে বই কিনি, অন্যকে বই কিনতে উৎসাহিত করি। আর পিডিএফকে না বলি!
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৭.৫/১০ -
বইঃ প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ
লেখকঃ তাসরুজ্জামান বাবু
প্রকাশনীঃ সময়
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩২০
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮৪
জনরাঃ থিওলজিকাল সাই-ফাই থ্রিলার! ( ব্যক্তিগত মতামত )
=============================================
প্রথমে বলি জনরার ব্যাপা���ে। ধর্ম ব্যাপারটা এর আগেও এসেছে আমাদের মৌলিক থ্রিলারে। ভেন্ট্রিলোকুইস্টে বাহাইজম-বাবইজম, মিনিমালিস্টে শিখ ধর্ম ( মিনিমালিজম ব্যাপারটাও এসেছে, যদিও এটা কোন ধর্ম নয়। ), মিথস্ক্রিয়ায় প্যাগান ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে। প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহতে তেমনি রয়েছে ইসলাম ধর্ম। তবে এই বইয়ে ধর্ম নিয়ে আলোচনা এসেছে ব্যাপকভাবে। আমার মতে এটি প্রথম বাংলা থিওলজিকাল থ্রিলার নয়। তবে বাংলার থ্রিলার জগতে থিওলজি ব্যাপকভাবে এসেছে এই বইটির হাত ধরেই। অবশ্য যদি সাইড জনরা হিসেব না করে মূল জনরার দিক দিয়ে চিন্তা করা যায়, তাহলে প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ বইটিকে বাংলার প্রথম থিওলজিকাল থ্রিলার বলাই যায়। এছাড়া বিভিন্ন সায়েন্টিফিক টার্ম নিয়েও ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। তাই আমার মনে হয়েছে জনরা হিসেবে একে ঠিকঠাকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে থিওলজিকাল সাই-ফাই থ্রিলার শব্দটিই! :P
------------------------------------------------------------------------------
এবার আসি কাহিনীর দিকে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অবতারণায় ফয়েজের জীবন পুরোপুরি ঘুরে যায়। ঢাবির রসায়নের ছাত্র থেকে বিসিএস চাকরীপ্রার্থী হয়ে সে ঘাঁটি গাড়ে মাদ্রাসার বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে। সেখানেই মাদ্রাসা প্রধান মুহতামিমের সান্নিধ্যে এসেই তার জীবন আরেক দফা ঘুরে যায়! সাধারণ এক যুবক থেকে সে হয়ে উঠে অতীব অসাধারণ ( গল্পের নায়ক আরকি! :P ) । এরপরে ধীরে ধীরে গল্পে অবতারণা ঘটেছে রয়েল লাইব্রেরী অভ আলেকজান্দ্রিয়া, গুপ্ত ভ্রাতৃসংঘ ওটিও, ঐতিহাসিক কিছু আধ্যাত্মিক গবেষণা, কিছুটা অ্যাকশন এবং অনেকটা অ্যাডভেঞ্চার! এবং এই সবকিছু জুড়েই ছিল ইসলাম।
------------------------------------------------------------------------------
বইটির প্লট দারুণ লেগেছে আমার কাছে। একদম খাপে খাপ প্লট! :p এক ফোঁটাও এদিক সেদিক হয়নি। যেরকম স্পর্শকাতর বিষয়বস্তু লেখক বেঁছে নিয়েছেন, তাতে এদিক সেদিক হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। এছাড়া লেখকের লেখনীও খুব ভালো। বেশ কিছু জায়গার লেখনী তো রীতিমত অসাধারণ।
বিভিন্ন সায়েন্টিফিক টার্ম নিয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে। সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের না হলে হয়তো কারো কারো বিরক্তি লাগতে পারে এই জায়গাটিতে। তবে আমার খারাপ/বিরক্তি লাগেনি। অবশ্য আমি বরাবরই উপন্যাসে ইতিহাস/সায়েন্সের এধরণের বিশদ আলোচনা পছন্দ করি।
------------------------------------------------------------------------------
চরিত্রায়নও খুব ভালো হয়েছে। আব্দুল মফিজ খুলনাভী, ফয়েজ, রোদসী, আবাসিসহ সবগুলো চরিত্রই দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন লেখক বইটিতে। এছাড়া কয়েকজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বেরও ক্যামিও অ্যাপিয়ারেন্স রয়েছে......সেখানেও লেখক দারুণ কাজ করেছেন।
------------------------------------------------------------------------------
তবে সবথেকে ভালো লাগার ব্যাপারখানা হচ্ছে, ইসলামকে কেন্দ্র করে এতদিনে কেউ একখানা পুর্নাঙ্গ থ্রিলার উপন্যাস লিখলেন। তাও আবার এত ডিটেইলে! এমন সব স্পর্শকাতর ব্যাপার নিয়ে লিখেছেন......উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে যে লেখককে ব্যাপক রিসার্চ করতে হয়েছে তা বোঝাই যায়......মোট কথা, বাহবা দিতেই হচ্ছে লেখককে। আরো গভীরে গিয়ে আলোচনা করতাম......কিন্তু স্পয়লার হয়ে যাবে! :P
------------------------------------------------------------------------------
একটি মাত্র দিক পুরোপুরি ঠিকঠাক মনে হয় নি। তা হচ্ছে ফয়েজ যেভাবে এতটা উঁচুতে চলে গেল। ব্যাপারটা এতটা সহজ তো মোটেও না আমার মতে। অবশ্য উপন্যাস ১০০% বাস্তববাদী হবেও না। :p তবে লেখক অনেক গভীরে ঢুকেছেন বলেই এটুকু সমালোচনা করতেই হল। :p :3
------------------------------------------------------------------------------
বইয়ের মানের তুলনায় প্রচ্ছদ খুবই সাধারণ হয়ে গেছে। এছাড়া কাগজ-বাঁধাই ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ঠিকঠাকই লেগেছে। বানান ভুল অল্প-স্বল্প চোখে পড়েছে। সহনীয় পর্যায়েই ছিল। আর দা��ের ব্যাপারে বললে......১৮৪ পৃষ্ঠার বই ২৫% ডিসকাউন্টে কিনলে ২৪০ টাকা......ঠিকই আছে। অবশ্য থ্রিলারকেন্দ্রিক প্রকাশনীগুলোর তুলনায় একটু বেশিই। তবে এর বাইরে গিয়ে চিন্তা করলে পারফেক্ট মূল্যই রাখা হয়েছে। যাই হোক, আমি অবশ্য বাংলাবাজারের শো-রুম থেকে ৩০% ডিসকাউন্টে কিনেছি।
------------------------------------------------------------------------------
এবারে রেটিং দেওয়া যাক। বেশ কিছু ব্যাপার খুবই ভালো লাগায় ৫ এ ৪.৪৫ দেব। :) লেখকের জন্য শুভকামনা রইলো। আশা করি আগামীতেও আমাদের দারুণ সব লেখা উপহার দেবেন। 😋 -
থিওলজিকাল থ্রিলার বস্তুটি খায় না মাথায় দেয়, তা এই বইটি পড়ার আগে জানতাম না। পড়ার পরেও যে খুব ভালো করে বুঝেছি - এমন দাবি করতে পারছি না। বরং জিনিসটাকে টেকনোগন্ধী ফ্যান্টাসি বলেই মনে হল। যাইহোক, বইয়ের প্রসঙ্গে আসি।
কাহিনিটি ইতিমধ্যেই চর্চিত তথা ডেসক্রিপশন হিসেবে প্রদত্ত। তাই নিয়ে কিছু বলার নেই, কারণ উইলফুল সাসপেনশন অফ ডিসবেলিফ ছাড়া (বা একটু বেশিরকম বিলিভার না হলে) এই বই পড়া অসম্ভব। এতে বিজ্ঞান এতই বেশিমাত্রায় অলৌকিক তথা অবিশ্বাস্য-র সামনে পশ্চাদপসরণ করেছে যে... তাই নিয়ে বেশি কিছ��� না ভাবাই ভালো।
বইটির ভারতীয় সংস্করণের তিনটি গুণের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইব। তারা হল:
১. পেপারব্যাক, ঝকঝকে ছাপা এবং নয়নসুখকর লে-আউট;
২. ভেতরে ক্যালিগ্রাফিক মোটিফের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার;
৩. বইয়ের শেষে ঘটনাস্থলের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দেওয়া ফটোগ্রাফ।
সব মিলিয়ে, মূলত পরিবেশনের গুণেই বইটি বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে বলে আমার মনে হয়েছে।
সুযোগ পেল�� পড়ে ফেলুন।