Title | : | বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স |
Author | : | |
Rating | : | |
ISBN | : | - |
Language | : | Bengali |
Format Type | : | Hardcover |
Number of Pages | : | 112 |
Publication | : | Published February 1, 2018 |
ওদিকে অপরিণামদর্শী বিজ্ঞানী জ্যাকব শ্যারন সঙ্গোপনে করে ফেলেছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কারটি! কী সেই আবিষ্কার যাতে কিনা ধ্বংস হয়ে যাবে প্রাণের পৃথিবী তথা সমগ্র মহাবিশ্ব? ছয়বন্ধু কীভাবেই বা গিয়ে পড়ল পাগল বৈজ্ঞানিকের হাতের মুঠোয়? তারা কি পারবে প্রাণ নিয়ে ফিরতে? পারবে কি রক্ষা করতে মায়াময় পৃথিবীকে?
টানটান উত্তেজনা...রোমখাড়া শিহরণ... আর দমবদ্ধ সাসপেন্স!
এটা কি অ্যাডভেঞ্চার?
এটা কি সায়েন্স ফিকশন?
এটা কি থ্রিলার?
-এটা একের ভেতর সব!!!
বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স Reviews
-
ভালো মানের একটি সার্থক সায়েন্স ফিকশন গল্প। সহজ ভাষায় হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জটিল কিছু থিউরি সন্নিবেশিত হয়েছে এই গল্পে। লেখক কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক টার্ম, উপমা ও তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়েছেন যেগুলো একেবারেই অভিনব। গতানুগতিক ভাবধারার বাইরে গিয়ে একটি সাহসী প্লটের অবতারণা করেছেন বলতেই হয়। বাংলায় কল্প-গল্প শাখাটি তুলনামূলক ভাবে এখনো নতুন, সে হিসাবে বাংলা সাহিত্যকে নতুন এই লেখকের দেবার আছে অনেক কিছু। সে জন্যে লেখালেখিতে তাকে আরও সময় দিতে হবে, পাঠক হিসাবে আমাদের নতুন এই লেখকের বই কিনতে ও পড়তে হবে, সমালোচক হিসাবে ছোটখাটো ভুল ত্রুটিগুলো স্নেহবৎসল দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরে লেখালেখিতে আরও উৎসাহিত করতে হবে। মেধাবী এই লেখকের সর্ব মঙ্গল কামনা করি।
সামগ্রিক হিসাবে আমার রেটিং ৩.৭৫। তবে নতুন লেখক হিসাবে ৫ দিয়ে উৎসাহিত করলাম। -
বইঃ বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স
লেখকঃ তাসরুজ্জামান বাবু
ধরণঃ সায়েন্স ফিকশন
পৃষ্ঠাঃ ১১২
মূল্যঃ ১৭৬টাকা
প্রকাশনঃ সময় প্রকাশন
কাহিনী সংক্ষেপঃ
বিজ্ঞানী জ্যাকব শ্যারন হঠাৎ করে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার করেন। তিন বছর আগে মহাকাশে ছুড়ে দেওয়া তার দ্রুততম স্পেসশিপ হেলেন-৮ খুঁজে বের করে অন্য আরেকটি মহাবিশ্ব। সে মহাবিশ্বে থিয়ান নামের একটি গ্রহে খুঁজে পায় প্রাণের অস্তিত্ব।
এত কম সময়ে একটি মহাবিশ্ব পাড়ি দিয়ে আরেকটি মহাবিশ্ব আবিষ্কার সত্যিই এক বিস্ময়কর ঘটনা। এই খবর জানাজানি হলে বিশ্ববাসীর কাছে রাতারাতি তিনি সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন। কিন্তু এই খবর অন্যকেউ জানার আগেই শ্যারন ও তার সহকারী থমাস জিগজ্যাগ নিখোঁজ হয়ে যান!
এদিকে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনে রাতারাতি গাছপালা সমৃদ্ধ একটি দ্বীপ জেগে উঠে। এ নিয়ে সকলের মধ্যে নানান জল্পনাকল্পনা। কেউ এ দ্বীপ নিয়ে একমতে আসতে পারে না। এর নাম রাখা হয় মিস্টারিল্যান্ড(শয়তানের দ্বীপ)! দ্বীপটি নিয়ে গবেষণা করতে এসেছিলেন আমেরিকার দুজন প্রবাসী বাঙালি প্রফেসর। কিন্তু দ্বীপে যাওয়ার পর তারা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। দ্বীপটিকে ঘিরে সবার মনে একটা চাপা ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি। তবে কয়েকবছর কেটে যাওয়ার পর সবাই বিষয়টি ভুলে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ফ্যাকাল্টি থেকে ট্যুরের আয়োজন করা হলে সবাই মিস্টারিল্যান্ড যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। দলটি সেই দ্বীপে পৌঁছালে রাতের বেলা অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে। দিনে আলাদা আলাদা দল করে দ্বীপটি ঘুরতে বের হলে ছয়জনের একটি দল হঠাৎ হারিয়ে যায়। সবাই পুরো দ্বীপ তন্নতন্ন করেও তাদের খুঁজে পায় না।
এভাবে একে একে সবাই নিখোঁজ হওয়ার কারণ কি? কি ঘটছে দ্বীপটিতে? যারা নিখোঁজ হচ্ছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে?
বিজ্ঞানী জ্যাকব শ্যারন ও তার সহকারীর নিখোঁজ হয়ে এবং মিস্টেরিল্যান্ডে নিখোঁজ ঘটনার সাথে কি কোন সম্পর্ক আছে? সবগুলোই কি একইসূত্রে গাঁথা? নাকি কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র?
পাঠ-পর্যালোচনাঃ
আমি সায়েন্স ফিকশন ঘরনার বই খুব একটা পড়িনি। তাছাড়া বিজ্ঞানের ছ��ত্রী নয় বলে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোও আমার মাথায় ঢুকে না। বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স বইটি একটি সায়েন্স ফিকশন ঘরানার বই। তবে এখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন টার্মগুলো লেখক অত্যন্ত সহজ ও হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কেউ যদি বিজ্ঞানের কিছু নাও জানে তবুও তার এই বইটি পড়তে কোন অসুবিধা হবে না।
বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। ছোটখাটো বলে এক বসাতেই শেষ হয়ে যায়।
বই পড়তে পড়তে আপনার খালি জানতে ইচ্ছা করবে পরে কি হতে চলেছে বা কি হতে পারে। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় লেখক সাসপেন্স জিইয়ে রেখেছেন।
প্রথম বারেই এমন চমৎকার সার্থক একটি সায়েন্স ফিকশন লেখার জন্য লেখক সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
মোটা মোটা গল্প উপন্যাস পড়তে আমার বেশ লাগে, তবে কেউ যদি অযথা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে গল্পটি বড় করতে চায়, তবে সে ক্ষেত্রে সব পাঠকই বোধকরি বিরক্ত হন।
এই বইয়ের আরেকটা ভালো দিক হচ্ছে লেখক অযথা কোন প্রসঙ্গ টেনে এনে গল্প বড় করেননি। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই দিয়েছেন।
টাইপিং এ কোন বানান চোখে পড়ে নি। কিংবা কে জানে পড়ার নেশায় ছিলাম বলে হয়ত খেয়াল করিনি।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বইটা সায়েন্স ফিকশন, ভৌতিক নয়। তবুও গভীর রাতে যদি কেউ পড়া শুরু করেন তাহলে খানিকটা হলেও ভয় পেতে পারেন(অন্তত আমি পেয়েছি)। হয়ত আমি খুবই ভীতু। তবুও বলব এতে শিউরিত হওয়ার বিষয়ও ছিলো।
লেখক সেই দ্বীপে রাতের বেলা একটা দানব পাখির কর্মকাণ্ডের এত নিখুঁত ভাবে বর্ণনা দিয়েছেন যে রাত আড়াইটার সময় পড়তে গিয়ে আমি সত্যিই ভয় পেয়েছি।
বইটা কল্পবিজ্ঞান হলেও লেখক সবকিছু যুক্তি দিয়ে বুঝেছেন, কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এটা ভালো লেগেছে।
প্রচ্ছদটাও বেশ অর্থপূর্ণ। কাহিনীর ছাপ রয়েছে প্রচ্ছদে।
খারাপ দিক বলতে একটা জায়গাতেই শুধু খটকা লেগেছে, সেটা হলো লেখক যে উইলফোর্স প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন এই বিষয়টা আদৌ হয় কিনা আমার জানা নেই। তবে না হলেও যেহেতু এটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সেহেতু এটা মেনে নেওয়া যায়। বিজ্ঞান কল্পকাহিনী তে বিজ্ঞান থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই, বরং একটুখানি বিজ্ঞান ও অনেকখানি কল্পনা মিশিয়ে তবে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী হয়।
শেষের দিকে লেখক বোধহয় একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন। সমাপ্তি টা খুবই ভালো ছিল, তবে আরো ভালো আশা করি।
ভবিষ্যৎ এ লেখক আরো অনেক ভালো ভালো সায়েন্স ফিকশন আমাদের উপহার দিবেন। এটাই আশা করি। -
Instant Review
সাইন্স ফিকশন পড়ার অভ্যাস নেই। তবুও পড়লাম। ঘন্টা তিনেকে টানা পড়ে শেষ করেছি। এমনভাবে বই পড়া হয়নি কখনো, অনেকদিন মাথার মধ্যে ঝুলছিল। এই জনরায় যেহেতু প্রথম পড়লাম, ইচ্ছে আছে বিষদে রিভিউ লিখবো।
প্রথম দুই/তিন পৃষ্ঠা পড়ে এই বই কেউ রেখে আসবে বিশ্বাস করিনা, লেখক দেখিয়েছেন তিনিও লিখতে পারেন। সমস্যা হল, এরপরে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। পরবর্তি চল্লিশ পৃষ্ঠার কনটেন্ট সর্বোচ্চ পাঁচ পৃষ্ঠা করা যেতে পারতো। আমি মূলত ডুবতে থাকি ষাট পৃষ্ঠার পর থেকে, কারণ এসময়েই দুটি প্রেক্ষাপটে বর্ণনা করা গল্পের যোগসুত্র স্থাপনে সেলাই শুরু করেন লেখক। টুইস্ট আসা শুরু করে তখন থেকেই।
মূলত ঢাবি পদার্থবিজ্ঞানের যে দল 'মিস্টরিল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যায় অন্য কোন জগতে সেটার রহস্যই বইটি। মূলত কল্পগল্পে যৌক্তিকথা দিয়ে বিচার করা যায়না, উচিৎও না। তবে লেখক তার আলোচনায় চেষ্টা করেছেন, কতটা বাস্তবতার কাছাকাছি নেওয়া যায় অথবা বর্ণনায় বাস্তব ভাবনা দেওয়া যায়। ��েই জায়গায় লেখক সক্ষমতা দেখিয়েছেন। পুরো তিন রেটিং দেওয়া যায় লেখকের চেষ্টার জন্য। এমন কল্পনার গল্পকে প্রমান করতে তিনি অনেক বেশি লেখাপড়া করেছেন বলে মনে হয়েছে।
তিন ভাগে ভাগ করে বিবেচনা করতে চাই গল্পটা। ভ্রমণ গল্পের স্বাদ পেয়েছি কিছুটা, কিশোর গল্প মনে হয়েছে। শুরুর দিকে ম্যাচিউরিটি কম ছিল। ঠিক একই চরিত্র দিয়ে তিনি বিজ্ঞানীর চেয়ে বেশি আচরন দেখ��য়েছেন।
পুরো বইয়ে লেখকের পজিটিভ দিক হল, তিনি পড়েন। শব্দ সমৃদ্ধ, আলোচনায় সারল্য ও গভীরতা দুটোই ছিল। -
কল্পকাহিনী রচিত হয় মানুষের কল্পনাশক্তির উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ মানুষের কল্পনাশক্তির বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে কল্পকাহিনী। যখন সে কল্পিত কাহিনীর সাথে যুক্ত হয় যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞান, তখন তা আর কোনো সাধারণ, তথাকথিত কল্পকাহিনী থাকে না। তখন তার নাম হয়ে যায় সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী । তখন সেটা আর মোটেও রূপকথার গল্পের মত অবিশ্বাস্য থাকে না। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ না দেখা গেলেও তাতে থাকে বৈজ্ঞানিক যুক্তির শাণিত ধার।
এমন-ই এক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর বই নিয়ে পাঠক সমাজের মাঝে হাজির হয়েছেন তরুণ লেখক তাসরুজ্জামান বাবু। তিনি তার সৃষ্টিকর্মের নাম দিয়েছেন "বিয়ন্ড দ্যা ম্যানমেইড ইউনিভার্স" (Beyond the man-made universe). ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত এ নামের বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়,"মানবসৃষ্ট মহাবিশ্বের বাইরে". নাম শুনে বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা লাভ করা যায় বৈকি! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বইয়ের নাম ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত হলেও এটি বাংলা ভাষায় রচিত একটি মৌলিক সাহিত্যকর্ম ; কোনো অনুবাদকর্ম বা অন্য কোনো সাহিত্যকর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে রচিত সাহিত্যকর্ম নয়। মহাবিশ্বের বাইরে থাকা আরেক মহাবিশ্বের গল্প........বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু বিজ্ঞানমনষ্ক যুবকের অসাবধানতার ফলে তাদের স্থান হয় পৃথিবীকে ধারণকারী মহাবিশ্বের বাইরে। সেখানে গিয়ে তাদের আরো দুইজন অধ্যাপকের সাথে পরিচয় লাভের সুযোগ ঘটে। সেখান থেকে তারা জানতে সক্ষম হয় যে কতিপয় বিকৃতমনা বিজ্ঞানীর চক্রান্তের ফলে আরেকটি মহাবিষ্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে ও পৃথিবী ধ্বংস হতে চলেছে কালের পরিক্রমায়। তখন তারা নিজেদের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানের সহায়তায় পৃথিবীকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। কীভাবে তারা হারিয়ে গেল? কীভাবেই বা তারা পৃথিবীকে রক্ষা করল? তা জানতে হলে একজন পাঠককে পড়তে হবে পুরো বইটি।
বইয়ের আলোচ্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে তো এতক্ষণ তো অনেক বকবকানি হলো। অনেক ভারী ভারী বস্তাপচা তাত্ত্বিক কথাবার্তা-ও বাদ পড়েনি সেখান থেকে। এবার আসা যাক, বইয়ের ভাষাশৈলী ও গুণগত মান সম্পর্কে। যে কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর বইয়ের একটি অন্যতম প্রধান গুণ বা বৈশিষ্ট্য, যা-ই বলি না কেন, হচ্ছে--- বইটিতে ঘটনার প্রবাহ এমনভাবে বর্ণিত থাকে যে তাতে পাঠকের জানবার আগ্রহ ক্রমান্বয়েই বাড়তে থাকে। তৃষিত পথিক যেমন একফোঁটা জলের আশায় মরুর পথে পথে ছুটে বেড়ায়, ঠিক তেমনি একজন প্রকৃত পাঠক ঘটনাচক্রের পরবর্তী অংশে কী ঘটতে চলেছে, তা জানবার জন্য ছটফট করতে থাকে। পুরো ঘটনার যবনিকাপাত না ঘটা পর্যন্ত যেন তার শান্তি নেই। এ কাজের পেছনে মূল অবদান থাকে একজন লেখকের। কেননা, লেখকের ভাষাশৈলী এ জ্ঞানতৃষা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে সদা-সর্বদা এক অননা ভূমিকা পালন করে থাকে। পাশাপাশি থাকে লেখকের নিজস্ব বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগের মিশেল, যা তাঁর সৃষ্টিকর্মকে পাঠক সমাজে অধি��তর গ্রহণযোগ্য করে তোলে। এসব দিকে বিবেচনায় আলোচ্য বইটি কোনোদিক দিয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের বর্ণনার পাশাপাশি সাবলীল ভাষায় সার্বিক উপস্থাপনা বইটিকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এছাড়া বইয়ের ভাষাশৈলী এমন সহজবোধ্য (বিশেষত বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনার ক্ষেত্রে) যে, স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যেকোনো বয়সী বাংলাভাষী পাঠকের পক্ষে তার মর্মার্থ বুঝতে বিশেষ কোনো বেগ পেতে হবে না। সর্বোপরি, বইটি সকল ধরনের পাঠক ও সাহিত্যবোদ্ধাদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে সমর্থ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
সবশেষে, নবীন এ লেখকের জন্য রইলো অশেষ শুভ কামনা! -
মনে করুন, আপনি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী একজন মানুষ। অ্যাডভেঞ্চারের আশায় অদ্ভুত সব রহস্যে ঘেরা এক দ্বীপে গেলেন, যার জন্মই হয়েছে ‘রাতারাতি’। রহস্যের উৎস খুঁজতে খুঁজতে একটি ওয়ার্মহোল এর ভেতর দিয়ে চলে গেলেন, পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের নতুন কোন পৃথিবীতে। আর সেখানে গিয়েই জানতে পারলেন, আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হতে সময় আছে মাত্র ২৪ ঘন্টা। তখন কী করবেন আপনি? কীভাবে রক্ষা করবেন প্রিয় পৃথিবীকে?
এমনই এক কঠিন প্রশ্নের দিকে ঠেলে দেয় তরুণ লেখক তাসরুজ্জামান বাবু’র কল্পবৈজ্ঞানিক থ্রিলার ‘বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স’ ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় তরুণ ক্যাম্পাস থেকে ট্যুরে গেছে অদ্ভুত সব রহস্যে ঘেরা একটি দ্বীপে। যার উত্থান হয়েছে রাতারাতি। সেই সময় দ্বীপটি নিয়ে নানা রকম ভয়ংকর এবং আজগুবি কথাবার্তা চলতে থাকে। সেসব তথ্য গবেষণা করতে এসেছিলেন আমেরিকার দুজন প্রবাসী বাঙ্গালী প্রফেসর। দ্বীপে প্রবেশের পরে আর তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ট্যুরে গিয়ে ছয়বন্ধু রহস্যের উৎস খুঁজতে খুঁজতে একটি ওয়ার্মহোল এর ভেতর দিয়ে চলে যায় পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের থিয়ান গ্রহে। সেখানে গিয়েই জানতে পারে, আমাদের পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। কী করবে অঙ্কুররা এখন?
মতামত : সবচেয়ে অভিনব ব্যাপারটি হলো গল্পের প্লট । প্রথাগত সায়েন্স ফিকশনের মতো নিছক গল্পের সাথে মিশ্রিত একচিমটি ‘অপবিজ্ঞান’ নয় । কিছুটা গল্প, কিছুটা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান, আর বাকিটা লেখকের অবিশ্বাস্য কল্পনাশক্তি । এমন হাইপোথিসিসধর্মী সায়েন্স ফিকশন বাংলা ভাষায় এই প্রথম পড়ার অভিজ্ঞতা হলো। বর্তমানে সায়েন্স ফিকশনের একটা গৎবাঁধা ধারা দাঁড়িয়ে গেছে, সেই ধারার মধ্যে একই ধরনের বিষয়বস্তুর চর্বিতচর্বণে সায়েন্স ফিকশন লেখা হচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর এগুলো হাস্যকর ও ছেলেভুলানো মনে হয়। সেই ভিত্তিতে বিবেচনা করলে লেখকের এই বইটি পড়ে রীতিমতো চমকে উঠতে হয়। এককথায় নবীন-প্রবীণ সকলেরই উপযোগী একটি বই । বইটির বর্ণনাভঙ্গিতেও অসাধারণত্বের ছাপ । টুকরো টুকরো বাক্য, যেন দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা । একই তালে বয়ে গেছে পুরো কাহিনী জুড়ে । সরল-সিধে ভাষার বর্ণনায় একধরনের মুগ্ধতা ঘিরে আছে। যে কোনো বইয়ে পাঠকের প্রথম বিবেচনা থাকে, লেখকের লেখনশৈলী পাঠককে এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায় টেনে নেয় কিনা। এক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠাতেই একটি কথাই বারবার মনে হয়েছে, কী হবে এবার?
বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট তেমন হয় না। লেখক এই জনরাটির নাম দিয়েছেন কল্পবৈজ্ঞানিক থ্রিলার। অর্থাৎ সায়েন্স ফিকশনের সাথে থ্রিল মিশ্রণ করে লেখক নতুন একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে তাঁকে অনেকাংশেই সফল বলা যায় । যদিও সায়েন্স ফিকশন আর থ্রিলের অনুপাতটা সমান ছিল না। তবু একক রচনার মধ্যে কল্পবিজ্ঞান, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার, সাসপেন্স, হরর ইত্যাদির সমন্বিত স্বাদ প্রদানের চেষ্টাকে স্বাগত জানাতেই হয় । সবশেষে লেখক এক চিমটি ‘ম্যাজিক রিয়েলিজম’ মিশিয়ে এটিকে একটি আধুনিক সাহিত্যকর্মের আদল দিতে প্রয়াস পেয়েছেন। কাহিনীর শেষে লেখক যে বার্তা পোঁছে দিতে চেয়েছেন তাও খুব আবেদনময়ী ।
বিজ্ঞানের অতি দুরুহ কিছু বিষয়কে লেখক এত সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করেছেন যা বোঝার জন্য বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই । সার্বিক বিবেচনায় বলব, বাংলাদেশের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে আরো একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের আগমনধ্বনি শোনা যায় । -
তিন বছর আগে জ্যাকব শ্যারন এর ছুঁড়ে দেওয়া দ্রুততম স্পেসশিপ হেলেন-৮ মহাবিশ্বে খুঁজে পেয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব। কিন্তু সে খবর অন্য কেউ জানার আগেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তোলপাড় করা খবর- 'নিখোঁজ হয়েছেন ইসরাইলের স্পেস রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর ডিরেক্��র জ্যাকব শ্যারন ও তার সহকারী থমাস জিগজ্যাগ।'
তবে সেই নিখোঁজ সংবাদকে শেষ পাতায় পাঠিয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোর সেদিনের প্রধান শিরোনাম- 'সেন্টমার্টিন দ্বীপের পাশে রহস্যময় দ্বীপের উত্থান!'
হঠাৎ এক সকালে সেন্টমার্টিন এর বাসিন্দারা দেখল তাদের দ্বীপের পাশে নতুন এক দ্বীপ জেগে উঠেছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো রাতারাতি জেগে ওঠা এই দ্বীপ পুরোটাই বিশাল বিশাল গাছগাছালিতে পূর্ণ। যেন কেউ একদম তৈরি করে বসিয়ে দিয়েছে। রহস্যময় এই দ্বীপের নাম দেওয়া হয় 'মিস্টেরিল্যান্ড'। দিনে দিনে এই দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠে অবিশ্বাস্য কথাবার্তা। সেসব গুজব যাচাইয়ে আসেন দুই প্রবাসী বাঙালি গবেষক। কিন্তু দু'দিন পর দ্বীপ নিয়ে রহস্য আরো বাড়িয়ে নিখোঁজ হন তাঁরা।
এসব অবিশ্বাস্য ঘটনার কথা শুনে অ্যাডভেঞ্চারের লোভে দ্বীপে পিকনিক করতে আসে ঢাবি'র ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পরদিনই গায়েব অঙ্কুর সহ ছয় ছাত্র!...কিন্তু এ কী, এ কোথায় এলো তারা ! অঙ্কুরের বিশ্লেষণী ক্ষমতা বলছে 'ভয়ংকর বিপদ!' জানতে হবে কিছু প্রশ্নের উত্তর- ড. শ্যারন গায়েব হলেন কেন? মিস্টেরিল্যান্ডের সাথে তার গায়েব হওয়ার সম্পর্ক কি? এর সাথে পৃথিবীর ভবিষ্যৎই বা নির্ভর করছে কীভাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে পড়লো এমন এক সত্য, যা সন্দেহ ছুঁড়ে দিল একক মহাবিশ্বের অস্তিত্বের প্রতি...
ব্যক্তিগত মতামত : একটি বইয়ের শুরু থেকে মূল ঘটনায় প্রবেশ পর্যন্ত পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখা খুব কঠিন কাজ । এক্ষেত্রে লেখক কাজটি ভালভাবেই করেছেন । সোজা কথায়- এক বসায় পড়ে উঠার মতো বই । প্লট নির্বাচনে নতুনত্ব দেখিয়েছেন। সায়েন্স ফিকশনের ধারা অনুযায়ী স্পেসশিপ আছে, এলিয়েন আছে, সায়েন্সের কচকচানিও আছে । তবে এগুলোর উপস্থাপনভঙ্গি ও নতুনত্ব বিরক্ত করেনি বরং আগ্রহ বাড়িয়েছে ।
এটি লেখকের দ্বিতীয় সায়েন্স ফিকশন। তার লেখা প্রথম সায়েন্স ফিকশন 'তৃতীয় অনুভূতি' গত বছরের অন্যতম রকমারি সায়েন্স ফিকশন বেস্টসেলার । এবারের বইয়ের জন্যেও শুভকামনা রইল।